হিটলার ও সিগারেট

চায়ের ভাড়ে প্রথম চুমুকটা দিয়েই রায়-দা বিশুর দিকে তাকালেন। বিশু প্যান্টের পকেট হাতড়ে মাথা নাড়ালো। তার মানে ওর কাছে নেই।
– “নেই মানে, তুই সিগারেট না কিনে আমাকে চা খেতে ডাকলি।” রায়-দা বলে উঠলেন।
– “না মানে ছিল কিন্তু কোথায় যে গেল…” বিশু কাচু মাচু মুখ করে বলে।
– “তোর কাছে সিগারেট আছে কি নেই তুই জানিস না।”
– “অাহ্ রায়-দা ছেড়ে দিন না, ও চা খেয়ে নিয়ে আসবে।” সমরেশ, রায়-দা কে শান্ত করার চেষ্টা করে।
– “তুমি তো জানো সমরেশ আমি চা, সিগারেট ছাড়া খেতে পারিনা।” সমরেশের কথার জবাব দিয়ে রায়-দা বিশুর দিকে তাকান। “যা হতভাগা সিগারেট নিয়ে আয়।”
বিশুও আর কথা না বাড়িয়ে সিড়ির দিকে পা বাড়ায়।

আমরা মানে সমরেশ, নকুল, রীতেশ, বিশু, আমি ও বিশ্বেশ্বর রায় ওরফে রায়-দা  যে যেখানেই থাকি না কেন প্রতি শনিবার আমরা একত্রিত হই আড্ডা দেওয়ার জন্য। আজ আমরা বিশুর সন্তোষপুরের বাড়িতে জড়ো হয়েছি। এই বাড়িতে বিশু একাই থাকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস-কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছে সে।

বিশুর আনা সিগারেটে এক লম্বা সুখ টান দিয়ে রায়-দা বললেন – “এবার বলো কি বলছিলে?”
– ” বলছিলাম এবার সিগারেট খাওয়া টা ছেড়ে দিলেই তো হয়।” নকুল চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বলে। “এই সিগারেটের আশায় আপনার চা টা ঠান্ডা জল হয়ে গেল।”
– “ছেড়ে দিতাম কিন্তু হিটলারের জন্য আর ছাড়া হলো না।” রায়-দা চায়ের চুমুক দিয়ে বললেন।
– “মানে?” আমরা সবাই এক সঙ্গে বলে উঠি।
– “হিটলারের সঙ্গে আপনার সিগারেট ছাড়ার কি সম্পর্ক!”
– “আছে আছে, সম্পর্ক আছে।” রায়-দা মুচকি হেসে বললেন। “তার আগে বল তোমাদের চোখে হিটলার কি রকম মানুষ ছিলেন?”
– “ওকে আমি মানুষ বলেই ধরিনা।” সমরেশ উত্তর দেয় “ওর মতো নৃসংশ প্রাণী পৃথিবীতে আর জন্মেছে কি না জানি না!।”
– “ঠিক, আমিও তাই মনে করি” রায়-দা বলেন “তাহলে বল ওর কথা কি আমাদের শোনা উচিত?”
– “না।” আমরা মাথা নাড়াই।
– “একজাক্টলি, ঠিক সেই কারণেই আমি আর সিগারেট ছেড়লাম না।”
– “খোলসা করে বলুন রায়-দা, আমরা কিছুই বোঝতে পারলাম না।”

– “তাহলে তো তোমাদের ইতিহাসের পাতা উল্টাতে হবে।” হাতের সিগারেটটা ছাই দানে ফেলে বললেন তিনি। “সালটা খুব সম্ভবত ১৯৩৯। জার্মানিতে প্রথমবার প্রমাণিত হয় যে সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, সেই সময় জার্মানির সর্বেসর্বা হিটলার। তাঁর কানে এই খবর যায়।
তিনি এই বিষয়ে আরও গবেষনা চালাতে বলেন। বছর খানেকের মধ্যেই হিটলারকে গবেষকেরা জানান দেয় যে, সিগারেট যে টানছে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হচ্ছে যারা ওর আসে পাশে রয়েছে। এখানে বলে রাখি জার্মানিতেই প্রথবার প্যেসিভ স্মোকিং শব্দটা ব্যবহার হয়।
যাই হোক হিটলার গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিগারেট বন্ধের ডাক দেন। জানোই তো কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।

Nazi Anti-smoking

গোটা জার্মানিতে অ্যান্টি স্মোকিং-এর ঝড় ওঠে। সিগারেটের বিজ্ঞাপণে বেশি করে ট্যেক্স চাপানো হয়।  নাৎসি পার্টির সমর্থকরা প্রচার চালায় যে, সিগারেট খায় তাদের শত্রু জিউসরা, হিপিরা এবং বুদ্ধিজীবীরা। সারা দেশে অ্যান্টি স্মোকিং পোস্টারে ভরিয়ে তোলা হয়। অফিস, বম্ব সেল্টার আর পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সিগারেট ব্যান করে দেওয়া হয়।”
– “তার মানে আপনি বলছেন যে হিটলার স্মোক করতো না।” আমি প্রশ্ন করি রায়-দা কে।
– “কেন করবে না। ভালো মতই করত। শোনা যায় দিনে প্রায় চল্লিশ খানা খেত। যদিও পরের দিকে ছেড়ে দেয়। তবে মদ খেতনা।”
– “আর ওর সেনারা, তাদের উপরেও কি বিধি নিষেধ ছিল নাকি!”
– “সেনা ছাউনি অ্যালাউ ছিল, কিন্তু দিনে ছ’টা।” রায়-দা উত্তর দিয়ে আর একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলেন। ধূয়া ছেড়ে বলেন “এবার বুঝলে আমি কেন সিগারেট ছাড়ছিনা।”

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান